রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই-আগষ্টে শহীদদের ছাড়া আর কারো প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কালের খবর পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল কাসাভা। কালের খবর চবি এক্স স্টুডেন্টস ক্লাব ঢাকা এর সভাপতি ব্যারিস্টার ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক স্বপন নির্বাচিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পন্ন। কালের খবর সীতাকুণ্ড হবে বাংলাদেশের অন্যতম মডেল উপজেলা : আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী। কালের খবর মাটিরাঙ্গার গুমতিতে মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মুরাদনগরে সামাজিক সংগঠনের শীতের কম্বল বিতরণ। কালের খবর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ‘স্বাধীনতা সোপানে’ শ্রদ্ধা নিবেদন। কালের খবর জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন। কালের খবর
আজ প্রখ্যাত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন। কালের খবর

আজ প্রখ্যাত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন। কালের খবর

এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :

আজ প্রখ্যাত অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার নারিন্দায় তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র- তিন মাধ্যমেই ছিল তার সমান পদচারণা। তিন দশকের বর্ণিল ক্যারিয়ারে তিনি উপহার দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র।

জন্ম ঢাকায় হলেও শৈশব-কৈশোরে স্থায়ীভাবে তার থাকা হয়নি ঢাকায়। বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরতে হয়েছে মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আরও অনেক জেলায়।

প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্কুলে। চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করেন ১৯৭০ সালে। এরপর একই বছর স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈব রসায়ন বিভাগে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর অর্থনীতি নিয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর পেশা হিসেবে বেছে নেন অভিনয়। যদিও ছাত্রজীবন থেকেই মঞ্চ নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।

১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জে মহল্লার একটি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয়ের যাত্রা শুরু হুমায়ুন ফরিদীর। স্কুল জীবনে থাকতেই নির্দেশনার খাতায় নাম লেখান। সে নাটকের নাম ছিল ‘ভূত’। এরপর ঢাকার মঞ্চে ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘ফণীমনসা’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকগুলোতে তার অভিনয় কেবল প্রসংসিতই হয়নি, হুমায়ুন ফরিদীকে করে তুলেছে অনন্য।

টিভি নাটকে হুমায়ুন ফরিদী প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় ‘নিখোঁজ সংবাদ’-এ। এরপর ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চাঁনমিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নীল আকাশের সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘ভবের হাট’ এসব নাটকের তার অভিনয় তাকে শুধু পরিচিতই করেনি, করে তুলেছে তুমুল জনপ্রিয়।

টিভি কিংবা মঞ্চে সেলিম আল দীন এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর সঙ্গেই ছিল এ অভিনেতার সর্বাধিক সংখ্যক কাজ। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গেও অনেক নাটকে কাজ করেছেন হুমায়ুন ফরিদী। বিশেষ করে হুমায়ুন আহমেদের ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিক নাটকে হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত চরিত্র ‘কানকাটা রমজান’ এখনও দর্শকমনে দাগ কেটে আছে।

প্রখ্যাত এ অভিনেতার সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল আফজাল হোসেনের। মূলত বন্ধু আফজাল হোসেনের সাহস ও উৎসাহে টিভি নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন হুমায়ুন ফরিদী।

এ প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, ‘ফরীদি নেই এ কথা ভাবতেই কেমন যেন লাগে! একটা শূন্যতা অনুভূত হয়। আমরা একসঙ্গে কত সময় কাটিয়েছি! কত স্মৃতি আমাদের! কত সুখের স্মৃতি, কত আনন্দের স্মৃতি। সত্যি আমি ফরীদিকে ভীষণ মিস করি।’

টিভি নাটকে হুমায়ুন ফরিদীর কাজ করার পেছনে আরও একজন মানুষের উৎসাহ ছিল। তিনি অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। হুমায়ুন ফরিদীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে অনেক বছর হয়ে গেল ফরীদি নেই। আমরা একসঙ্গে বছরের পর বছর কাজ করেছি। থিয়েটার ছিল আমাদের ধ্যান-জ্ঞান। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে আমরা দীর্ঘ একটা সময় কাটিয়েছি। আসলে ফরীদি ছিল একজন জাত শিল্পী। জাত শিল্পী কমই আছে আমাদের দেশে। জন্মদিনে তাকে আরও বেশি মিস করছি।’

চলচ্চিত্রেও হুমায়ুন ফরিদী ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ দিয়েই এ মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু। শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’ দিয়ে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে তার সাফল্যগাঁথা শুরু।

এরপর ‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের র্যোদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’সহ আরও অনেকগুলো ছবি হুমায়ুন ফরিদীকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। তার অভিনীত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই ছিল সুপারহিট।

বিশেষ করে খলচরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় এখনও দর্শকচোখে তৃপ্তি জুড়ায়। ‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৪ সালে সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান এ অভিনেতা। ২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট মুক্তি পাওয়া উত্তম আকাশ পরিচালিত ‘এক জবানের জমিদার, হেরে গেলেন এবার’ ছিল তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র।

অভিনয় করলেও লেখালেখির প্রতি তেমন কোনো দুর্বলতা ছিল না হুমায়ুন ফরিদীর। নির্মাণের প্রতি আগ্রহ থাকলেও অভিনয় ব্যস্ততার কারণে সেখানেও খুব বেশি দেখা যায়নি তাকে। তবে কয়েকটি টেলিফিল্ম, ধারাবাহিক ও এক ঘণ্টার নাটক নির্মাণ করেছেন এ অভিনেতা।

ব্যক্তিজীবনে বেশ সাদামাটা মানুষ ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেই শুরু করেন সংসার জীবন। কিন্তু সেটার বিচ্ছেদ ঘটে। সে ঘরে দেবযানি নামে তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

এরপর প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে ঘর বাঁধেন এ অভিনেতা। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর থেকে ২০১২ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একাই দিনযাপন করেছেন প্রখ্যাত এ অভিনেতা।

করোনায় যখন বিশ্ব আক্রান্ত তখনও বাংলাদেশে আলোচনায় হুমায়ুন ফরিদী। এ মহামারীতে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ‘অকশন ফর অ্যাকশন’ এর আয়োজনে নিলামে তোলা হয় তার ব্যবহৃত বস ব্র্যান্ডের একটি চশমা। ১ মে নিলামে তোলার পর চশমাটির বিক্রি হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকায়!

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com